বুটেক্সে বাস সংকট, ভোগান্তির কবলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা
- আপডেট সময় : ০১:১১:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৯৪ বার পড়া হয়েছে
বুটেক্সে বাস সংকট, ভোগান্তির কবলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) বাস সংকটে চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ।
পর্যাপ্ত বাস না থাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস না থাকা, পুরোনো বাস ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবত অভি্যোগ করে আসছে ।
প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে যাওয়া সত্বেও শিক্ষার্থীরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করতে পারছে না। ভাড়া করা পুরোনো বিআরটিসি এর বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাস কেনা হলেও একটি কেবল ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং অন্যটি সার্ভিসিং এর বাহিরে রয়েছে ।
বিশেষ করে তন্তু (সাইনবোর্ড-ক্যাম্পাস রোড) বাসের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেন আরও একধাপ বেশি। উক্ত রুটে প্রায় ২০০ জনের অধিক শিক্ষার্থী যাতায়াত করলে ও মাত্র ৫২ আসনবিশিষ্ট একটি একতলা বাস চলাচল করে ।ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদুরঝোলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে যাতায়াত করছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ডাবল ডেকার বা একতলা দুটি বাস যুক্ত করার দাবি জানানো হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৪৭ ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ হাসিবুর রহমান রাতুল জানান, “সাইনবোর্ড থেকে ক্যাম্পাস রুটে শি ক্ষার্থী সংখা ২০০ এরও অধিক একই সাথে যেখানে নিয়মিত বাস ব্যবহার করে ৮৫-৯০ জন। ফলস্রুতি তে অনেক শিক্ষার্থী কে দাড়িয়ে যেতে হয়,এমন অবস্থা হয় যে বাসে দাঁড়ানোর ও জায়গা থাকে না তখন অনেক শি ক্ষার্থী কে দরজায় দাড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়। কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও এ বিষয়ে তারা ব্যাপক উদাসিন। প্রতিবার বাজেট হলে ব্যাবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে ও কয়েক বছরে ও এর প্রতিফলন ঘটে নি।“
একই ব্যাচ ও বিভাগের শিক্ষার্থী নুর নাহার আক্তার বলেন, “আমাদের রুটের (সাইনবোর্ড-ক্যাম্পাস) বাসের যাত্রীসংখ্যা সিটের তুলনায় দিগুন এরও বেশি । ছেলেরা তো দাঁড়িয়ে যায়ই গত ১.৫ বছর ধরে ছেলেদের পাশাপাশি প্রতিদিনই ২০-২৫ জনের মত মেয়ে রাও দাড়িয়ে যায়। এখন তো দাড়িয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে । আমার বাসা খিলগাঁওতে , শুধু খিলগাঁও না, বাসাবো, বৌদ্ধ মন্দির, মুগদা, গোলাপবাগ এসব রুটে সরাসরি আর কোন বাস সার্ভিস না থাকায়, আমার মতো এই রুটের মেয়েদের জন্য এই বাসই যাতায়াতের একমাত্র উপায় বলা যায়। কিন্তু এখন বাসে দাড়ানোর জায়গা ও থাকে না। এই রুটে ডাবল ডেকার বা তন্তু বাসে র পাশাপাশি আর একটি বাস দেয়া হলে এই ভোগান্তি লাঘব সম্ভব।আমি তন্তু বাসে ১.৫ বছর ধরে যাতায়াত করি , কিন্তু ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় হাতে গোনা কয়েকদিন মনে হয় বসে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ।সাধারণ দিন গুলোতে তাও মেনে নে ওয়া যায়,কিন্তু একজন মেয়ে তো সব সময় সুস্থ থাকে না ওই বিশেষ সময় যখন দাড়িয়ে যেতে হয় তখন আর কিছু বলার থাকে না। আর এতক্ষণ দাড়িয়ে আবার পুনরায় দাড়িয়ে ল্যাব করা (যেদিন সকালে ল্যাব থাকে) সেদিন কষ্টের যেন আর সীমানা থাকে না।“
৪৯ ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, “ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার ও বনশ্রী থেকে আমরা প্রায় ৬০ এর অধিক শিক্ষার্থী যাতায়াত করে থাকি । এই রুট এ কোন বাস না থাকায় নিয়মিত যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়; তাছাড়া এই রুট এর বাস ভাড়াও অত্যধিক বেশি । ঔ রুট এর বাস গুলো সম্পূর্ন যাত্রী দ্বারা পূর্ণ থাকে ফলে নিয়মিত দাড়িয়ে যাতায়াত করে ল্যাব ক্লাস গুলো সময় মত যথা মনযোগ সহকারে করা অনেকটা অসম্ভব বিষয়। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় এই রুট এ আমাদের ভার্সিটি বাস সার্ভিস এখন সময়ে র দাবি ।“
এ ব্যাপারে যানবাহন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, “আমাদের ইউজিসি থেকে ৪ টি বাসের অনুমোদন নেয়া আছে। তবে আমাদের আরো দুই থেকে তিন টা বাস দরকার। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে । সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি ভিসি স্যারকে অবহিত করব এবং তিনি কিছুদিন মনিটরিং করে ইউজিসি’ র কাছে আবেদন করবেন। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয়।“
বুটেক্সের নিজস্ব বাস কেন নেই এবং বর্তমানে যে বিআরটিসির যে বাসগুলো আছে সেগুলো পুরনো হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আসলে আমরা সব সময় চাই নতুন বাস। শিক্ষার্থীরা যদি পুরোনো বাস নিয়ে অভিযোগ তুলে তাহলে আমি বিআরটিসির দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সাথে কথা বলে নতুন বাসের ব্যবস্থা করব।“
বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব বাস কেন নেই এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “বর্তমানে অর্থমন্ত্রনালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন কেনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে । ফলে কেবল শিক্ষার্থীরাই নয় কর্মকর্তারাও ভুক্তভোগী হচ্ছেন। কর্মকর্তারাও বিভিন্ন রুটে যানবাহনের জন্য আবেদন করেছেন। কেননা কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য কোন যানবাহন না থাকায় শিক্ষকদের সাথে যাতায়াত করতে হত। ফলে অফিস আওয়ার এর অনেক পূর্বে তাদের ক্যাম্পাসে আসতে হয় এবং অফিস আওয়ার শেষ হয়ে গেলে ও অনেকটা সময় ক্যাম্পাসে বসে থাকতে হয়।“
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস থাকা অবশ্যই ভালো। কেননা বিআরটিসির সার্ভিস ও ভালো না এবং ভাড়া বেশি নেয় তারা।“
পাশাপাশি ড্রাইভার সংকটের কথাও জানান তিনি । তবে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন “শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে বর্তমানে বিআরটিসির যেসকল সিঙ্গেল ডেকার রয়েছে সেগুলোর বদলে ডাবল ডেকার আনা সম্ভব।“
উল্লেখ্য বুটেক্সে পরিবহন পুলে বর্তমানে মোট ১০ টি গাড়ি আছে । এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির ৪ টি বাস রয়েছে । এর মধ্যে তন্তু সাইনবোর্ড, বুনন উত্তরা, মসলিন আজিমপুর এবং চরকা বাস মিরপুর রুটে চলাচল করে ।