বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের কৃতি শিক্ষার্থী: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি ও তিন উপাচার্যকে সংবর্ধনা প্রদান

- আপডেট সময় : ০৫:৫০:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে

বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের পক্ষ থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এবং তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। সংবর্ধিত ব্যক্তিরা সকলেই বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থী।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কমপ্লেক্সে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেন।
এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানকে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে ভূমিকা রাখার জন্য সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান ১৯৯৫ সালে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ডিভিএম ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগ থেকে ১৯৯৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ড. সুফিয়ান ১৯তম বিসিএসের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৯ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করার এবং নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ড. সুফিয়ান শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, বেলজিয়াম, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপাল ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্মেলন ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম ১৯৮৩ সালে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তাঁর ব্যাচে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ড. ইসলামের গবেষণার মূল ক্ষেত্র ভাইরোলজি, মলিকুলার এপিডেমিওলজি এবং ভ্যাকসিন উন্নয়ন। তিনি পোলট্রি এবং গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগ যেমন নিউক্যাসল ডিজিজ, ইনফেকশিয়াস ব্রঙ্কাইটিস এবং লাম্পি স্কিন ডিজিজের ভ্যাকসিন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি মাল্টিপ্লেক্স আরটি-পিসিআর কিট এবং একাধিক ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য রোবোটিক আরবিসি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ডিভিএম এবং ১৯৯৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনসহ চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক লাভ করে মাস্টার অব সায়েন্স ইন ফার্মাকোলজি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. ইসলাম ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ১০৮টি। গুগল স্কলারের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধগুলোর মোট সাইটেশন সংখ্যা ২,২৩৪টি।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ১৯৯৯ সালে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে ডিভিএম ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগ থেকে ২০০১ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ড. রহমান দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে গবেষণা ও অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। তিনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে বহু গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “সত্যবাদিতা, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন কঠিন কিছু নয়। দেশের সকল ভেটেরিনারিয়ানের লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের মানুষের সেবা করা, বিশেষ করে কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করা। এই লক্ষ্য পূরণে মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরির বিকল্প নেই। তাই উপাচার্যদের উচিত জাতির সেবায় কোয়ালিটি গ্রাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে এগিয়ে আসা।”
ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, “আমাদের এই চারজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশের তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি অনুষদের ঐতিহ্য এবং অবদানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “ভেটেরিনারি অনুষদ শুরু থেকেই দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ এবং টেকসই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা ও শিক্ষার মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। আধুনিক গবেষণাগার, কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় এই অনুষদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”
অধ্যাপক বাহানুর আরো বলেন, “আজকের এই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা তাদের কর্মজীবনে যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, তা আমাদের শিক্ষার মান, গবেষণার উৎকর্ষ এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের সক্ষমতারই প্রতিফলন। তাদের অবদান কেবল শিক্ষার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; তারা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
*****
রিসালাত আলিফ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ