ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শ্যামনগরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনি খাতুনের বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন আগৈলঝাড়ায় ৭শ পিচ ইয়াবা ও ১ কেজি ৮শ গ্রাম গাঁজা ব্যবসায়ীসহ ৩ জন আটক বরিশালের গৌরনদীতে ৮ মাসে কোরআনে হাফেজ ১০ বছরের শিশু আবদুল্লাহ দুমকি প্রেসক্লাব পরিবর্তনের অঙ্গীকারে-নতুন কমিটি গঠন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ দিনের ছুটি যশোরে জাল ওয়ারিশ সনদ প্রদান, ইউপি প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ আজ মানিকগঞ্জে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা, ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত তৎপরতায় প্রাণে রক্ষা ভোমরা স্থলবন্দর প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমানকে ক্রেস প্রদান সাতক্ষীরায় শহীদ আসিবের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও কবর জিয়ারত করে শিবির

বাংলাদেশে ব্যাংকের নিরাপত্তায় যে ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হয়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১০ বার পড়া হয়েছে

নিজেস্ব প্রতিবেদক:-
*বান্দরবানে দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের দু’টি এলাকার ব্যাংকে অস্ত্রধারীদের এ ধরনের হামলার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে- নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো কতটুকু পালন করা হচ্ছে?*
নিয়ামানুযায়ী ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কী কী পদক্ষেপ নিতে হয়? এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গাইডলাইন রয়েছে কি না?

ব্যাংকগুলো বা সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর দায়ই বা কতখানি?

এমন নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে আসছে।ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী দুই থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব ধরনের ব্যাংকে থাকতে হবে।
*যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে ব্যাংকে*
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত গাইডলাইন রয়েছে।

সারাদেশের সব ব্যাংকগুলোকে ওই গাইডলাইন অনুসরণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে দুই থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

এই স্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে –

১. বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা থাকতে হবে।

২. ব্যাংকের যে রুমে ভল্ট থাকে সেটিকে স্ট্রং রুম বলা হয়। এই রুম পুরোপুরি আরসিসি ঢালাই হতে হবে। সেটি ইটের হতে পারবে না।

যে ভল্টে টাকা রাখা হয় সেটির দরজা মোটা স্টিলের। এর দরজা হবে ফায়ার-প্রুফ এবং বুলেটপ্রুফ।

৩. ব্যাংকের ভল্টের তালা – চাবির নিয়ন্ত্রণ তিনজনের কাছে থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে। দ্বায়িত্বরত ব্যবস্থাপকের কাছে যে চাবিটি থাকবে তাকে ‘কাভারিং কি’ বলে।

বাকি চাবি ব্যবস্থাপকের মনোনীত দুইজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে থাকবে। এই দুইজন সাধারণত ভল্ট খোলা ও বন্ধের কাজে নিয়োজিত থাকেন।

এই তিন ব্যক্তির হাতেই শুধুমাত্র টাকা রাখার ভল্টের চাবির নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

যে কোনো একটি চাবি দিয়ে কোনভাবেই এই ভল্ট খোলা যাবে না।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ব্যাংকের টাকার ভল্টে একটা অ্যালার্ম সিস্টেম থাকতে হবে।

অর্থাৎ ভল্টে এমন একটা ডিভাইস থাকবে যাতে ওই রুমে কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছু প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যালার্ম বেজে উঠে।

এর রিমোট সিস্টেমটি ব্যবস্থাপকের বাসায় অথবা তার ফোনে থাকবে। যাতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভল্টে কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়েছে কি না তা জানতে বা বুঝতে পারেন।

অনেক সময় এই অ্যালার্ম স্থানীয় বা নিকটস্থ থানার সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।

৫. নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের প্রবেশ পথে নিরাপত্তা প্রহরী থাকবে। এসব প্রহরীরা বন্দুকধারী হতে হবে।

এসব বন্দুক সচল রয়েছে কি না বছরে একবার বা দুইবার তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

সারা দেশের তফসিলি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর যত শাখা রয়েছে, সব শাখাতেই এসব নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাংক লুটের ঘটনাটি ঘটে। ধানমণ্ডির শুক্রাবাদে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের এক শাখায় এ লুটের ঘটনায় তোলপাড় চলে দেশজুড়ে।

এরপরই ওই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে।

ওই বছর ৩১শে জানুয়ারি দেয়া প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়েছে, যে সব ব্যাংকের শাখায় লকার রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

*ব্যাংকাররা যা বলছেন*
ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত সরকারি ট্রেজারি বা সোনালী ব্যাংকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন।

কিন্তু অন্যান্য ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য বা বেসরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সির সদস্যদের নিয়োগ করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের সিইও আফজাল করিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা রয়েছে তা প্রত্যেকটি ব্যাংকেই অনুসরণ করা হয়”

“ব্যাংকের ভল্টের দুইটা চাবি থাকে। একটা চাবি সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকে। আরেকটা চাবি ব্যাংকের জয়েন্ট কাস্টোডিয়ানের কাছে থাকে। যে কোনো একটা চাবি দিয়ে ভল্টের তালা খোলা সম্ভব না। এটি শতভাগ অনুসরণ করা হয়,” বলেন মি. করিম।

সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ভেদে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে, সিটি এরিয়াতে ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারও মোতায়েন করা হয় বলে জানান মি. করিম।

তবে, নিরাপত্তার জন্য কতজন প্রহরী থাকবে তা এলাকা ভেদে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া যে অ্যালার্ম থাকার কথা রয়েছে সেটিও বেশিরভাগ ব্রাঞ্চেই রয়েছে।

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা বেশিরভাগ ব্যাংকই অনুসরণ করে। ট্রেজারি বা ব্যাংকের বড় ব্রাঞ্চে সিকিউরিটি আরো স্ট্রংলি করা হয়”।

“মফস্বল ব্রাঞ্চে এই নির্দেশনা পালন করে কি না তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টাকাকে সিকিউর করার জন্য এসব নির্দেশনাই যথেষ্ট,” বলেন মি. আমিন।

এদিকে, মঙ্গলবার ও বুধবার বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এক সংবাদ সংম্মেলনে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রাখছি। তারা যে কার্যক্রমগুলো করছে আমরা সেটা সম্পর্কে অবগত আছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো”।

*সিকিউরিটি এজেন্সিগুলো যা করছে*
শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বেসরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৮ সালে নিরাপত্তা নিয়ে যে সার্কুলার দেয় তাতে, এসব এজেন্সির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকে কোনো ধরনের চুরি, ডাকাতি বা ক্ষয়ক্ষতি হলে এর দায় নিতে এসব এজেন্সিগুলো বাধ্য থাকবে। এটি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যে পরিমাণ লকার রয়েছে তার উপর।

এছাড়াও যখন ব্যাংকগুলো বাইরে থেকে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেবে না সেক্ষেত্রে নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দিতে পারবে।

বিভিন্ন ব্যাংকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান এলিট ফোর্স।

এই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকশ সদস্য দেশের প্রায় ৪২টি ব্যাংকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকারি–বেসরকারি সব ব্যাংকেই এ প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে থাকে।

এই প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেশন অফিসার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল হাই বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিভিন্ন শিফটে ব্যাংকগুলো ফিজিক্যাল সিকিউরিটির জন্য প্রহরী নেয়। একইসাথে গানম্যান সার্ভিসও অনেক ব্যাংক নিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের থাকে”।

কোনো কোনো ব্যাংক নয়শত নিরাপত্তা প্রহরীও এ প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ করেছে বলে জানান তিনি।

শুধু ব্যাংকের শাখার নিরাপত্তার দায়িত্বই নয় বরং বিভিন্ন সময় এক ব্যাংকের শাখা থেকে আরেক ব্যাংকে অথবা ব্যাংক থেকে এটিএম বুথে টাকা ট্রান্সফারের দায়িত্বও এই ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে।

মি. হাই বলেন, “বিভিন্ন ব্যাংকের টাকাপয়সার যে মুভমেন্ট হচ্ছে তার নিরাপত্তাও আমরা দিয়ে থাকি। কারণ অর্থ পরিবহন করার জন্য আমাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে”।

‘ক্যাশ ইন ট্রান্সজেক্ট ভেহিকেল’ বা সিএটি ভেহিকেল নামে বিশেষ ধরনের এক যানবাহনে এ ধরনের অর্থ স্থানান্তর করা হয় বলে জানান তিনি। এসময় গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হয়ে থাকে।

*দেশে ব্যাংক ডাকাতির যে কয়েকটি উদাহরণ*
দেশে সর্বশেষ যে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা আলোড়ন তুলেছিলো সেটি ২০১৫ সালে আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ডাকাতির একটি ঘটনা।

ওই ঘটনায় জড়িতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

জঙ্গি কর্মকাণ্ডের তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই হামলা করা হয় বলে গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

ডাকাতির সময় গুলি করে ও কুপিয়ে ব্যাংকে আটজনকে হত্যা করা হয়।

এ সময় ডাকাতরা গ্রেনেড ও ককটেল ব্যবহার করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে কাঠগড়া এলাকায় এক ধরনের তাণ্ডবের সৃষ্টি করেছিল।

এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৬ সালে ছয় জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

আরো একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ৯ই মার্চ ঢাকায় বেসরকারি ব্যাংক ডাচ -বাংলা ব্যাংকের সোয়া এগার কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

ওইদিন মিরপুরের ডিওএইচএস থেকে মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়িতে করে সাভারের ইপিজেডে ব্যাংকটির বুথে ওই টাকা নেয়া হচ্ছিলো।

অনেকটা ফিল্মি কায়দায় সেদিন সকালে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজে ডাকাত দল ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা-ভর্তি ওই গাড়ির পথরোধ করে।

গাড়িতে থাকা কর্মীদের মারধর করে টাকা ভর্তি চারটি ট্রাংক ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ডাকাতদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিলো না। ডিবি পরিচয়ে এই ডাকাতি হয়। এছাড়া টাকা বহনের সময় নিয়মানুযায়ী সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা থাকলেও সেটি ছিল না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

বাংলাদেশে ব্যাংকের নিরাপত্তায় যে ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হয়

আপডেট সময় : ০৯:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

নিজেস্ব প্রতিবেদক:-
*বান্দরবানে দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের দু’টি এলাকার ব্যাংকে অস্ত্রধারীদের এ ধরনের হামলার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে- নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো কতটুকু পালন করা হচ্ছে?*
নিয়ামানুযায়ী ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কী কী পদক্ষেপ নিতে হয়? এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গাইডলাইন রয়েছে কি না?

ব্যাংকগুলো বা সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর দায়ই বা কতখানি?

এমন নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে আসছে।ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী দুই থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব ধরনের ব্যাংকে থাকতে হবে।
*যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে ব্যাংকে*
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত গাইডলাইন রয়েছে।

সারাদেশের সব ব্যাংকগুলোকে ওই গাইডলাইন অনুসরণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে দুই থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

এই স্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে –

১. বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা থাকতে হবে।

২. ব্যাংকের যে রুমে ভল্ট থাকে সেটিকে স্ট্রং রুম বলা হয়। এই রুম পুরোপুরি আরসিসি ঢালাই হতে হবে। সেটি ইটের হতে পারবে না।

যে ভল্টে টাকা রাখা হয় সেটির দরজা মোটা স্টিলের। এর দরজা হবে ফায়ার-প্রুফ এবং বুলেটপ্রুফ।

৩. ব্যাংকের ভল্টের তালা – চাবির নিয়ন্ত্রণ তিনজনের কাছে থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে। দ্বায়িত্বরত ব্যবস্থাপকের কাছে যে চাবিটি থাকবে তাকে ‘কাভারিং কি’ বলে।

বাকি চাবি ব্যবস্থাপকের মনোনীত দুইজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে থাকবে। এই দুইজন সাধারণত ভল্ট খোলা ও বন্ধের কাজে নিয়োজিত থাকেন।

এই তিন ব্যক্তির হাতেই শুধুমাত্র টাকা রাখার ভল্টের চাবির নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

যে কোনো একটি চাবি দিয়ে কোনভাবেই এই ভল্ট খোলা যাবে না।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ব্যাংকের টাকার ভল্টে একটা অ্যালার্ম সিস্টেম থাকতে হবে।

অর্থাৎ ভল্টে এমন একটা ডিভাইস থাকবে যাতে ওই রুমে কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছু প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যালার্ম বেজে উঠে।

এর রিমোট সিস্টেমটি ব্যবস্থাপকের বাসায় অথবা তার ফোনে থাকবে। যাতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভল্টে কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়েছে কি না তা জানতে বা বুঝতে পারেন।

অনেক সময় এই অ্যালার্ম স্থানীয় বা নিকটস্থ থানার সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।

৫. নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের প্রবেশ পথে নিরাপত্তা প্রহরী থাকবে। এসব প্রহরীরা বন্দুকধারী হতে হবে।

এসব বন্দুক সচল রয়েছে কি না বছরে একবার বা দুইবার তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

সারা দেশের তফসিলি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর যত শাখা রয়েছে, সব শাখাতেই এসব নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাংক লুটের ঘটনাটি ঘটে। ধানমণ্ডির শুক্রাবাদে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের এক শাখায় এ লুটের ঘটনায় তোলপাড় চলে দেশজুড়ে।

এরপরই ওই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে।

ওই বছর ৩১শে জানুয়ারি দেয়া প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়েছে, যে সব ব্যাংকের শাখায় লকার রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

*ব্যাংকাররা যা বলছেন*
ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত সরকারি ট্রেজারি বা সোনালী ব্যাংকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন।

কিন্তু অন্যান্য ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য বা বেসরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সির সদস্যদের নিয়োগ করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের সিইও আফজাল করিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা রয়েছে তা প্রত্যেকটি ব্যাংকেই অনুসরণ করা হয়”

“ব্যাংকের ভল্টের দুইটা চাবি থাকে। একটা চাবি সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকে। আরেকটা চাবি ব্যাংকের জয়েন্ট কাস্টোডিয়ানের কাছে থাকে। যে কোনো একটা চাবি দিয়ে ভল্টের তালা খোলা সম্ভব না। এটি শতভাগ অনুসরণ করা হয়,” বলেন মি. করিম।

সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ভেদে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে, সিটি এরিয়াতে ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারও মোতায়েন করা হয় বলে জানান মি. করিম।

তবে, নিরাপত্তার জন্য কতজন প্রহরী থাকবে তা এলাকা ভেদে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া যে অ্যালার্ম থাকার কথা রয়েছে সেটিও বেশিরভাগ ব্রাঞ্চেই রয়েছে।

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা বেশিরভাগ ব্যাংকই অনুসরণ করে। ট্রেজারি বা ব্যাংকের বড় ব্রাঞ্চে সিকিউরিটি আরো স্ট্রংলি করা হয়”।

“মফস্বল ব্রাঞ্চে এই নির্দেশনা পালন করে কি না তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টাকাকে সিকিউর করার জন্য এসব নির্দেশনাই যথেষ্ট,” বলেন মি. আমিন।

এদিকে, মঙ্গলবার ও বুধবার বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এক সংবাদ সংম্মেলনে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রাখছি। তারা যে কার্যক্রমগুলো করছে আমরা সেটা সম্পর্কে অবগত আছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো”।

*সিকিউরিটি এজেন্সিগুলো যা করছে*
শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বেসরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৮ সালে নিরাপত্তা নিয়ে যে সার্কুলার দেয় তাতে, এসব এজেন্সির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকে কোনো ধরনের চুরি, ডাকাতি বা ক্ষয়ক্ষতি হলে এর দায় নিতে এসব এজেন্সিগুলো বাধ্য থাকবে। এটি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যে পরিমাণ লকার রয়েছে তার উপর।

এছাড়াও যখন ব্যাংকগুলো বাইরে থেকে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেবে না সেক্ষেত্রে নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দিতে পারবে।

বিভিন্ন ব্যাংকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান এলিট ফোর্স।

এই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকশ সদস্য দেশের প্রায় ৪২টি ব্যাংকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকারি–বেসরকারি সব ব্যাংকেই এ প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে থাকে।

এই প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেশন অফিসার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল হাই বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিভিন্ন শিফটে ব্যাংকগুলো ফিজিক্যাল সিকিউরিটির জন্য প্রহরী নেয়। একইসাথে গানম্যান সার্ভিসও অনেক ব্যাংক নিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের থাকে”।

কোনো কোনো ব্যাংক নয়শত নিরাপত্তা প্রহরীও এ প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ করেছে বলে জানান তিনি।

শুধু ব্যাংকের শাখার নিরাপত্তার দায়িত্বই নয় বরং বিভিন্ন সময় এক ব্যাংকের শাখা থেকে আরেক ব্যাংকে অথবা ব্যাংক থেকে এটিএম বুথে টাকা ট্রান্সফারের দায়িত্বও এই ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে।

মি. হাই বলেন, “বিভিন্ন ব্যাংকের টাকাপয়সার যে মুভমেন্ট হচ্ছে তার নিরাপত্তাও আমরা দিয়ে থাকি। কারণ অর্থ পরিবহন করার জন্য আমাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে”।

‘ক্যাশ ইন ট্রান্সজেক্ট ভেহিকেল’ বা সিএটি ভেহিকেল নামে বিশেষ ধরনের এক যানবাহনে এ ধরনের অর্থ স্থানান্তর করা হয় বলে জানান তিনি। এসময় গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হয়ে থাকে।

*দেশে ব্যাংক ডাকাতির যে কয়েকটি উদাহরণ*
দেশে সর্বশেষ যে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা আলোড়ন তুলেছিলো সেটি ২০১৫ সালে আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ডাকাতির একটি ঘটনা।

ওই ঘটনায় জড়িতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

জঙ্গি কর্মকাণ্ডের তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই হামলা করা হয় বলে গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

ডাকাতির সময় গুলি করে ও কুপিয়ে ব্যাংকে আটজনকে হত্যা করা হয়।

এ সময় ডাকাতরা গ্রেনেড ও ককটেল ব্যবহার করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে কাঠগড়া এলাকায় এক ধরনের তাণ্ডবের সৃষ্টি করেছিল।

এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৬ সালে ছয় জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

আরো একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ৯ই মার্চ ঢাকায় বেসরকারি ব্যাংক ডাচ -বাংলা ব্যাংকের সোয়া এগার কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

ওইদিন মিরপুরের ডিওএইচএস থেকে মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়িতে করে সাভারের ইপিজেডে ব্যাংকটির বুথে ওই টাকা নেয়া হচ্ছিলো।

অনেকটা ফিল্মি কায়দায় সেদিন সকালে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজে ডাকাত দল ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা-ভর্তি ওই গাড়ির পথরোধ করে।

গাড়িতে থাকা কর্মীদের মারধর করে টাকা ভর্তি চারটি ট্রাংক ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ডাকাতদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিলো না। ডিবি পরিচয়ে এই ডাকাতি হয়। এছাড়া টাকা বহনের সময় নিয়মানুযায়ী সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা থাকলেও সেটি ছিল না।