বরিশালে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি ডা. শফিকুর রহমান

- আপডেট সময় : ০৮:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে

বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধি:-
বরিশালের জামায়াতের আমির জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হলো কর্মী সম্মেলনে
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক দল নয়। তারা গণহত্যাকারী সিন্ডিকেট। গণহত্যাকারী দলের প্রত্যেকের বিচার হবে। এদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তারা আমাদের নিষিদ্ধ করেছে।আল্লাহতায়ালা তাদের দেশ থেকে বিতারিত করেছেন।তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে আর বাংলাদেশ কবুল করবেনা। তারা অসংখ্য আলেম সমাজকে গায়েব করেছে, তাদের পরিবারের চোখের পানি আল্লাহতায়ালা কবুল করেছেন।মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির বলেন, আগে গণহত্যার বিচার হোক। তারপর জনগণ রায় দেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকার আছে কিনা।যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যুদ্ধ এখন শুরু হয়েছে, কর্মীরা তৈরি থাকুন। আজ বাংলাদেশের মানুষ বৈষম্য চান না। তিনি বলেন, একটি নিরাপদ, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি এই বার্তা প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের আহবান করেছেন।২০০৫ সালের পর মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে বরিশাল জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অনেকেই আমার কাছে প্রশ্ন করছেন আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচনে অশংগ্রহণ করতে পারবে কিনা। তাদের আমি বলেছি, আগে গণহত্যার বিচার হোক, তারপরে ক্ষতিগ্রস্থরাই রায় দেবে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা।রাজনীতির নাম যদি গণহত্যা হয় তাহলে এমন দল বাংলাদেশের জনগন বরদাস্ত করবে না। আর রাজনীতির নাম যদি জনকল্যান হয়, তাহলে জনগন যাকে পছন্দ করবে তাকে বরন করে নেবেন। আওয়ামী লীগ প্রমান করেছে তারা কোন রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি গণহত্যার সিন্ডিকেট। তারা সবচেয়ে বেশি কস্ট দিয়েছে জামায়াত ইসলামকে।কোরানের পাখিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। গত ১ আগস্ট আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মাত্র চারদিনের মধ্যে মানুষের মনে তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।আমিরে জামায়াত আরও বলেন, চাঁদাবাজ, লুন্ঠনকারী, দখলকারীদের আর বাংলাদেশ কবুল করবে না। জাতীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।জামায়াতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমিও চাই বরিশাল থেকে ভোলায় সেতু যাবে, ভোলাবাসী কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। তেমনি ভোলা থেকে গ্যাস বরিশালসহ সারাবাংলাদেশে যাবে।
বাংলাদেশের মানুষ আজ বৈষম্য চায়না। বরিশালে যেসব সমস্যাগুলো সমাধান হয়নি, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের শুরু করতে হবে। আমরা পুরোবরিশাল বিভাগকে উন্নত হিসেবে দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা যদি এই জমিনের খেদমত করার সুযোগ দেন, তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সকল সমস্যা সমাধান করা হবে। ফ্যাসিবাদ বিদায়ের শেষ আন্দোলনটা রাজনীতির ছিলোনা। এই আন্দোলনটা ছিলো ছাত্র, যুবক ও তরুনদের। তাই সকল গণহত্যাকারীদের বিচার করার জন্যও জামায়াতের আমির সরকারের কাছে জোর দাবি করেছেন।গণহত্যাকারী প্রত্যেকের বিচার হবে : আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার রাক্ষস হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার লোভে গণহত্যা চালিয়েছে। এমন দল আর কোনোদিন মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না গণহত্যাকারীদের প্রত্যেকের বিচার হবে। আওয়ামী লীগের শাসন দেশকে গণতন্ত্র ও ইনসাফ থেকে বঞ্চিত করেছে। এটি আর চলতে দেওয়া হবেনা।মহানগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল হালিম, ময়াযযম হোসাইন হেলাল, জেলা আমির আব্দুল জব্বার।নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি ইনসাফ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজকের প্রজন্ম বৈষম্যের শিকল ভাঙতে প্রস্তুত। ক্ষমতা নয়, আমরা শান্তি চাই। জামায়াতকে সুসংগঠিত রাখতে প্রতিটি কর্মীকে নিষ্ঠা ও ঐক্যের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আমীরে জামায়াত আরও বলেন, আমরা চাই গণহত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হোক, তাদের দলের বিচার হোক।শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা তো নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করেন; তো দেশপ্রেমিক হলে দেশে আসেন। বিচার মোকাবেলা করুন। আমাদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়েছেন। আপনারা তো প্রকাশ্যে গণহত্যা চালিয়েছেন।আওয়ামী লীগের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার চারদিন পর তারা নিজেরাই নিষিদ্ধ হয়েছে।দলটির প্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বিভেদ তৈরি করে দেশটাকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে অনেকেই জীবন দেয়। কিন্তু এভাবে বুক পেতে জীবন দেওয়া আবু সাঈদের ঘটনা বিরল। আবু সাঈদ মুক্তির মহানায়ক। জুলাই-আগস্টে শহীদরা যে জন্য জীবন দিয়েছে সেই লড়াইটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন; তারা এখন জিন্দা শহীদ।কর্মী সম্মেলনের সভাপতি বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ঈদগাহ মাঠে যাতে সম্মেলন হতে না পারে তার জন্যও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বিগত সময়ে বাতিল হওয়া সকল প্রকল্পসমূহ চালু করার দাবি করেন।সবশেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান চরমোনাইর প্রথম পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাকের কবর জিয়ারত করেন। পরে দুপুরে খাবার গ্রহণ শেষে ডা. শফিকুর রহমান বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেছেন।