ঢাকা ১২:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শাল্লা থানা পরিদর্শন করলেন সুনাগঞ্জের পুলিশ সুপার যশোরের কপোতাক্ষ লাইন্স হাসপাতালের চেয়ারম্যান হলেন অ্যাডভোকেট দেবাশীষ দাস আপ বাংলাদেশ’র বান্দরবান জেলার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কুলিয়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের মারপিটে গুরুত্বর জখম-১, থানায় অভিযোগ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর হামলার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন ছাত্র সমাজের ঐক্য ও শিক্ষার মানন্নয়নের ডাক নিয়ে, বিষম্ভরপুরে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কুলটিয়ায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধ ঘের খনন, অভিযান চালালেন ইউএনও নিশাত তামান্না সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন এর “শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে দক্ষিণ মাদার্শা সেবাশ্রমে তিনদিনব্যাপী মহোৎসব অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা

পাঠ্যসূচিই যেনো সীমাবদ্ধতা শেখার আতুড়ঘর

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:৪৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫ ১৩২ বার পড়া হয়েছে

সঞ্চিতা সরকার,খুবি প্রতিনিধি:-

৩রা মে, আন্তর্জাতিক প্রেস স্বাধীনতা দিবস। এ দিনটি প্রতিটি দেশের মতই বাংলাদেশের জন্যও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হলেও বাস্তবতায় এটি নানা বাঁধার মুখোমুখি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরাও এই বাস্তবতার সাথে পরিচিত হচ্ছেন পাঠক্রমের পাঠ্য ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।

সাংবাদিকতা মানেই শুধু তথ্য পরিবেশন নয়, বরং সত্যকে তুলে ধরার সাহস। আর সেই সাহস গড়ে ওঠে শেখার সময়েই। তাই সাংবাদিকতা শিক্ষা ও প্রেস ফ্রিডম একে অপরের পরিপূরক। একটিতে সীমাবদ্ধতা মানে অপরটিতে স্বাধীনতার সংকট।
‘গণমাধ্যমের আইন ও নীতি’, ‘সংবাদের নৈতিকতা’, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম’ এমন অনেক কোর্সে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কিভাবে আইনি বিধিনিষেধ, রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক স্বার্থ কিংবা সামাজিক সংবেদনশীলতা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার উপর প্রভাব ফেলে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক সারা মনামী হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিকতা শেখার সুযোগ সীমিত। শিক্ষাজীবন থেকেই আমাদের নানা ধরনের ফিল্টারিং পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়। কর্মজীবনে সেই বাস্তবতা আরও কঠিন হয়। হামলা, মামলা এবং নানামুখী আশঙ্কা সাংবাদিকদের জন্য নিত্যসঙ্গী। কাজের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ করে দিলে তা কখনোই স্বাধীন সাংবাদিকতা হতে পারে না। এর ফলে বিভিন্ন পর্যায়ে জবাবদিহিতার অভাব তৈরি হয়। অথচ দেশের উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য।

শিক্ষার্থীরা শেখে কিভাবে রাজনৈতিক বা কর্পোরেট চাপের কারণে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়, সংবাদমাধ্যমে নিয়োগ বা কাজের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, হাতে কলমে তারা শেখে মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিং করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হওয়া সহ প্রভৃতি সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে। তখন তারা বুঝতে পারে, সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতাগুলো কেবল ব্যক্তিগত বা একাডেমিক নয়, বরং একটি কাঠামোগত সংকটের অংশ।এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অর্ক মন্ডল বলেন, “সাংবাদিকতা আমাদের শেখায় কীভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে, সমাজের আয়না হতে হবে, ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে শেখানো হয় কোথায় থামতে হবে, কোন সত্য গোপন রাখতে হবে। তাহলে কি আমরা সাংবাদিকতা শিখছি, না কি সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছি! বাস্তবে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, স্বনিয়ন্ত্রণ (self-censorship), রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ, মালিকানা কাঠামো ও কর্পোরেট প্রভাব সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করছে। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার দিলেও তা বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়”।

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে। বিভিন্ন আইনি কাঠামো সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করছে। এসব সীমাবদ্ধতাগুলোই একাডেমিক শিক্ষার পর্যায় থেকেই স্বীকার ও বিশ্লেষণ করা হয়, যা ভবিষ্যৎ সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্ন করার সাহস, সত্য বলার ক্ষমতা কিংবা স্বাধীন চিন্তার জোর গড়ে তুলতে সাহায্য করে।এ বিষয়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ আহম্মেদ বলেন, সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতা প্রথমে শুনতে তা কিছুটা শেকল পরানোর মতো মনে হলেও, “আমার দৃষ্টিতে এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পেশাদার সাংবাদিকতার প্রাণ নিহিত। বরং আমি একে সাংবাদিকতার নৈতিক দিক বা ন্যায়নীতির অংশ বলেই মনে করি।তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। এখানে কেবল ন্যায়নীতি নয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের কারণে অনেক সময় সংবাদযোগ্য তথ্যও প্রকাশ করা সম্ভব হয় না”।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংবাদভিত্তিক সংগঠন যেমন ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’, ‘অদম্য বাংলা’ ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সংবাদ প্রকাশ ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা চর্চা করছেন। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, বাস্তব কাজের পরিবেশে আরও বেশি স্বাধীনতা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

পাঠ্যসূচিই যেনো সীমাবদ্ধতা শেখার আতুড়ঘর

আপডেট সময় : ১০:৪৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

সঞ্চিতা সরকার,খুবি প্রতিনিধি:-

৩রা মে, আন্তর্জাতিক প্রেস স্বাধীনতা দিবস। এ দিনটি প্রতিটি দেশের মতই বাংলাদেশের জন্যও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হলেও বাস্তবতায় এটি নানা বাঁধার মুখোমুখি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরাও এই বাস্তবতার সাথে পরিচিত হচ্ছেন পাঠক্রমের পাঠ্য ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।

সাংবাদিকতা মানেই শুধু তথ্য পরিবেশন নয়, বরং সত্যকে তুলে ধরার সাহস। আর সেই সাহস গড়ে ওঠে শেখার সময়েই। তাই সাংবাদিকতা শিক্ষা ও প্রেস ফ্রিডম একে অপরের পরিপূরক। একটিতে সীমাবদ্ধতা মানে অপরটিতে স্বাধীনতার সংকট।
‘গণমাধ্যমের আইন ও নীতি’, ‘সংবাদের নৈতিকতা’, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম’ এমন অনেক কোর্সে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কিভাবে আইনি বিধিনিষেধ, রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক স্বার্থ কিংবা সামাজিক সংবেদনশীলতা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার উপর প্রভাব ফেলে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক সারা মনামী হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিকতা শেখার সুযোগ সীমিত। শিক্ষাজীবন থেকেই আমাদের নানা ধরনের ফিল্টারিং পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়। কর্মজীবনে সেই বাস্তবতা আরও কঠিন হয়। হামলা, মামলা এবং নানামুখী আশঙ্কা সাংবাদিকদের জন্য নিত্যসঙ্গী। কাজের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ করে দিলে তা কখনোই স্বাধীন সাংবাদিকতা হতে পারে না। এর ফলে বিভিন্ন পর্যায়ে জবাবদিহিতার অভাব তৈরি হয়। অথচ দেশের উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য।

শিক্ষার্থীরা শেখে কিভাবে রাজনৈতিক বা কর্পোরেট চাপের কারণে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়, সংবাদমাধ্যমে নিয়োগ বা কাজের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, হাতে কলমে তারা শেখে মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিং করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হওয়া সহ প্রভৃতি সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে। তখন তারা বুঝতে পারে, সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতাগুলো কেবল ব্যক্তিগত বা একাডেমিক নয়, বরং একটি কাঠামোগত সংকটের অংশ।এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অর্ক মন্ডল বলেন, “সাংবাদিকতা আমাদের শেখায় কীভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে, সমাজের আয়না হতে হবে, ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে শেখানো হয় কোথায় থামতে হবে, কোন সত্য গোপন রাখতে হবে। তাহলে কি আমরা সাংবাদিকতা শিখছি, না কি সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছি! বাস্তবে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, স্বনিয়ন্ত্রণ (self-censorship), রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ, মালিকানা কাঠামো ও কর্পোরেট প্রভাব সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করছে। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার দিলেও তা বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়”।

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে। বিভিন্ন আইনি কাঠামো সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করছে। এসব সীমাবদ্ধতাগুলোই একাডেমিক শিক্ষার পর্যায় থেকেই স্বীকার ও বিশ্লেষণ করা হয়, যা ভবিষ্যৎ সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্ন করার সাহস, সত্য বলার ক্ষমতা কিংবা স্বাধীন চিন্তার জোর গড়ে তুলতে সাহায্য করে।এ বিষয়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ আহম্মেদ বলেন, সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতা প্রথমে শুনতে তা কিছুটা শেকল পরানোর মতো মনে হলেও, “আমার দৃষ্টিতে এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পেশাদার সাংবাদিকতার প্রাণ নিহিত। বরং আমি একে সাংবাদিকতার নৈতিক দিক বা ন্যায়নীতির অংশ বলেই মনে করি।তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। এখানে কেবল ন্যায়নীতি নয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের কারণে অনেক সময় সংবাদযোগ্য তথ্যও প্রকাশ করা সম্ভব হয় না”।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংবাদভিত্তিক সংগঠন যেমন ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’, ‘অদম্য বাংলা’ ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সংবাদ প্রকাশ ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা চর্চা করছেন। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, বাস্তব কাজের পরিবেশে আরও বেশি স্বাধীনতা প্রয়োজন।