কালিয়াকৈরে শ্রমিক ফেডারেশন আতংকে কারখানাসহ স্থানীয় বাড়ীর মালিক ও ব্যবসায়ীরা
- আপডেট সময় : ০৪:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৯৩ বার পড়া হয়েছে
প্রতিনিধি নিজেস্ব:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি শ্রমিক ফেডারেশন আতংকে ভুগছে উপজেলার মৌচাকের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বাড়ীর মালিক, ব্যবসায়ীসহ কারখানা কর্তৃপক্ষ। ওই শ্রমিক সংগঠনের উস্কানীতে কারখানায় অসন্তোষসহ নানা অস্থিরতা বিরাজ করার আশংকার অভিযোগ উঠেছে। বাড়ীর মালিক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি কারখানায় শ্রমিক অসেন্তাষ দেখা দিলে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেয়। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়ী থেকে শ্রমিকরা চলে যাওয়ায় ক্ষতি গ্রস্থ হতে হয়।
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি ওই সংগঠনের উস্কানীতে আসন্ন ঈদে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। এঘটনায় স্থানীয় লিবাস কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানা একটি সাধারণ ডায়েরী এবং গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ,বাড়ীর মালিক ও ব্যাবসায়ী সুত্রে জানা যায়,গাজীপুরের কালিয়াকৈরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমিকরা লিবাস কারখানার সামনে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় এম এস স্পিনিং এবং হ্যামকো ফুটওয়্যার কারখানার এর শ্রমিক পরিচয়ে তথাকথিত শ্রমিক শরিফুল ইসলাম এবং জগদীসসহ কয়েকজন মিটিং করতে ছিল। এসময় এলাকাবাসী ওই শ্রমিকদের সন্দেহ হয় যে তারা এলাকায় আবারও অস্থিরতা বিরাজ করার পায়তারা করছে। এমন অভিযোগ এনে এলাকাবাসী তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এঘটনায় স্থানীয় লিবাস কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই হামলার ঘটনায় জড়িত দাবি করে একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাদী হয়ে লিবাস টেক্সটাইল কারখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ি করে বিজিএমইএ সভাপতি বরার শ্রমিকদের উপর হামলার লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে তথ্যানুসন্ধানে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক ফেডারেশনের লোকজন স্থানীয় কারখানার শ্রমিকদের ইতিপুর্বেও নানা উস্কানী দিয়ে কারখানায় অসেন্তাষ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বাড়ীর মালিকরা বাড়ী ভাড়া থেকে বঞ্চিত হয় এবং বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের বেচা কেনা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। তবে সব প্রতিকুলতা কাটিতে যখন কারখানা চালু হয়েছে তখন তারা আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কিন্ত ওই দিন ওই শ্রমিকরা যখন মিটিংয়ে বসে তখন এলাকার লোকজন মনে করছে আবার তারা কারখানা বন্ধের পায়তারা করছে। এরকম সন্দেহে এলাকাবাসী তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর হামলা করে।
স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর লিবাস কারখানা গেইটের সামনের ব্যাবসায়ী আঃ লতিফ বলেন,ওই দিন শরিফুল এবং জগদীস এখানে এসে মিটিং করছিল। তখন এলাকার লোকজনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে যে তারা আবার কারখানা বন্ধের পায়তারা করছে। তখন তাদের উপর ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। এদিকে শ্রমিক অসেন্তাষ থাকলে দোকানে বেচাকেনা এক প্রকার বন্ধ থাকে।
হামলার স্বীকার জগদীস বলেন, ওই দিন কোনাবাড়ী থেকে শ্রমিক ফেডারেশনের দুইজন লোক আসে। তারা এসে আমার সাথে কথা বলে চলে যায়। এসময় এলাকার কয়েকজন লোক এসে আমাকে বলে তুই আবার কারখানায় অসেন্তাষ করার পায়তারা করতাছিস এই বলে আমাকে মারপিট করে। তবে এখানে লিবাস কারখানার কোন লোক জড়িত না।
লিবাস টেক্সটাইল কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোঃ তানভির হোসেন বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় কারখানার সামনে বাজারে মারপিটের ঘটনা ঘটে। সেখানে আমাদের কারখানার কোন লোক ছিলনা বা জড়িত না। কিন্ত একতা গার্মেন্ট ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক কামরুল হাসান শ্রমিকদের মারপিটের ঘটনায় আমাদের কারখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ি করে বিজিএমইএ বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন। যা অত্যান্ত দুঃখজনক। তাছাড়া একতা গার্মেন্ট ফেডারেশনের লোকজন আমাদের কারখানায় প্রবেশ করে সুকৌশে কারখানায় অসন্তোষ সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। আবারও কারখানা অসন্তোষ সৃষ্টি হলে আসন্ন ঈদে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে বেগ পেতে হবে।
জগদিসের মা বাবা বলেন,ওই দিন আমার ছেলে আমাদের দোকানে ছিল। এ সময় অপরিচিত দুইজন লোক এসে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়।তার কিছু সময় পর ফিরে আসলে এলাকার লোক এসে আমার ছেলেকে বলে তুই আবার এম এস এ স্পিনিং বন্ধ করতে চাচ্ছিস এই বলে তারা আমার সামনে এলোপাথারী মারতে থাকে। তবে আমরা যাদেরকে দেখেছি তাদের মধ্যে লিবাস কারখানার কোন লোক ছিল না।
এলাকাবাসী ও কালিয়াকৈর উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ দুলাল আহম্মেদ বলেন, শ্রমিক ফেডারেশন নামের কিছু লোকজন কারখানা শ্রমিকদের ইস্কানী দিয়ে কারখানা বন্ধসহ এলাকায় বিশৃংখলার পায়তরা করছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় মিটিং এর নামে অরাজকতার সৃষ্টি করার অভিযোগে এলাকাবাসী তাদের প্রতিহত করার চেষ্টার জন্য তাদের ধাওয়া করে সরিয়ে দেয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ওসি নিতাই চন্দ্র সরকার বলেন,লিবাস টেক্সাইল বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।