ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নতুন কুঁড়ি ও মার্কস অলরাউন্ডার কৃতিত্বে ফেনীর দুই শিক্ষার্থী কুতুবদিয়া কালী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভা রাজাপুরে ধানের শীষের পক্ষে গোলাম আজম সৈকতের গণসংযোগ শার্শায় সাংবাদিক মনি’র মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কাউখালি বেকুটিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ইং পালিত শাল্লায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম’র উপজেলা শাখায় কমিটি গঠন করা হয় বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গ্রীন ভয়েসের মানববন্ধন কুলিয়া চরবালিথা মুনষ্টার তরুণ সংঘের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা উজিরপুরে বিএনপি নেতা বহিষ্কার: ধর্মীয় সম্প্রীতি ভাঙা ও কুকীর্তির গল্প শ্যামনগরে বিশ্ব নদী দিবসে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

আগৈলঝাড়ায় বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১০০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ সোহেল রানা
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি:

সারা দেশে প্রচন্ড তাপদাহে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠলেও কৃষকরা ক্ষেতের ধান নিরাপদে ঘরে তুলতে এখনই বৃষ্টি চাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি জন্য ইসতিসকার নামাজ শেষে মোনাজাত করছে সাধারন লোকজন।

এর ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কৃষকদের মাঝে। এখানে ২৬ হাজার ৮ শত ৪ জন কৃষক জমির পাকা ধানের ৪০ ভাগ ঘরে তুললেও বাকী ৬০ ভাগ আধা-পাকা ধান এখনো জমিতে রয়েছে।

অব্যাত তাপাদাহে জমির ধান তুলতে কৃষকদের কষ্ট আরো বৃদ্ধি পেলেও আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা বৃষ্টি চাচ্ছে না।মঙ্গলবার সকালে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ক্ষেতে বাম্পার ফলন হলেও উদপাদিত ফসল ঘরে তুলতে ঝড়-বৃষ্টির আশংকায় ভুগছেন কৃষকরা।

ফুল্লশ্রী গ্রামের খোকন হাওলাদার ৬০ শতাংশ জমি ১২ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে বাকপাড়া ব্লকে বোরো চাষাবাদ করেছে। জমিতে ফসল ভাল হয়েছে। ধানকাটা শ্রমিক না পাওয়ায় স্ত্রী সেহরন বেগমকে নিয়ে প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে ধান কাটছে।

কৃষক ভবরঞ্জন বিশ্বাস তিনজন শ্রমিক দিয়ে নিজের ৮০শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাকে একাজে সহযোগীতা করছেন স্ত্রী কল্পনা বিশ^াস। চাষী হেমায়েত ফকির ৫ একর জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন। তিনি আল্লাহ’র কাছে ফরিয়াদ করে বলেন, হে আল্লাহ এই মুহুর্তে আমাদের এলাকায় বৃষ্টি দিয়ো না।

চাষী রাম প্রসাদ দাসের ৪০ শতাংশ জমির ধান পাকলেও শ্রমিক না পাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির আশংকায় নিজেই ধান কাটতে শুরু করেছেন।বাকাল এলাকার চাষী রমনী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, দুই একর জমির বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। প্রচন্ড তাপদাহের কারনে ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

একজন শ্রমিক সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানকাটা মজুরি দিতে হয় ৮শত টাকা। আমরা কষ্ট করে জমিতে বাম্পার ধান ফলিয়েছি। এই মুহুর্তে বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমবে। ফলে জমির ধান তুলছে কষ্ট হবে। এবং শ্রমিক পাওয়া যাবে না।

বাকাল গ্রামের চাষী সুশীল হালদার বলেন, প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে জমি থেকে পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। তাপদাহের কারনে ধান কাটতে গিয়ে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরছে। তাপদাহ থেকে ধান কাটার শ্রমিকদের নিরাপদে রাখতে খাবারের পাশাপাশি ঠান্ডা পানি ও খাবার স্যালাইনের দেওয়া হচ্ছে।

তার পরেও আমরা ধান ঘরে তুলতে আরো কষ্ট করতে রাজি আছি। এই মুহর্তে বৃষ্টি হলে আমার মত শতশত চাষী ধান তুলতে ভোগান্তিতে পরবে।

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা থেকে নির্মল দাসের নেতৃত্বে ১৯ জনের একটি দল ধান কাটার জন্য বসুন্ডা এলাকায় আসার পরে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে ধান কাটছে। তারা জানায়, আমরা মালিকদের কাছ থেকে ছয় ভাগায় ধান কাটতেছি।

তবে বৃষ্টি হলে ক্ষেতে পানি জমে আমাদের ধান কাটতে কষ্ট হবে। ঝালকাঠী জেলা থেকে রিপন হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি ধান কাটা শ্রমিকের দল আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামে এসেছে। রিপন জানান, আমরা এখানে একমাস ধান কেটে জনপ্রতি ২০ মন করে ধান নেওয়ার টার্গেট করেছি।

এতে আমাদের পরিবারের ৬ মাসের খাবার হবে। বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমলে আমারে টার্গেট পুরন হবে না। আমরা আগামী ১৫-২০দিনে বৃষ্টি চাই না।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা থেকে ধানকাটা হারভেস্টার মেশিন নিয়ে বড়মগরা গ্রামে এসেছেন ওবায়দুল্লাহ খলিল। তিনি প্রতি শতাংশ জমির ধানকাটা ও মাড়াই বাবদ ১শত টাকা নেন। যদি এখন বৃষ্টি হয় তাহলে জমিতে পানি জমলে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা সম্ভব হবে না। তাই এই মুহুর্তে বৃষ্টির প্রয়োজন নেই।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় সাংবাদিকদের বলেন, এই উপজেলায় ৯হাজার ৪ শত ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষেতের ৫০ ভাগের বেশী আধা-পাকা ধান এখনও জমিতে রয়েছে। এই মুহুর্তে বৃষ্টি হলে প্রায় ২৭ হাজার কৃষকরা জমির ধান তুলতে ভোগান্তিতে পরবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

আগৈলঝাড়ায় বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা

আপডেট সময় : ১০:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

মোঃ সোহেল রানা
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি:

সারা দেশে প্রচন্ড তাপদাহে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠলেও কৃষকরা ক্ষেতের ধান নিরাপদে ঘরে তুলতে এখনই বৃষ্টি চাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি জন্য ইসতিসকার নামাজ শেষে মোনাজাত করছে সাধারন লোকজন।

এর ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কৃষকদের মাঝে। এখানে ২৬ হাজার ৮ শত ৪ জন কৃষক জমির পাকা ধানের ৪০ ভাগ ঘরে তুললেও বাকী ৬০ ভাগ আধা-পাকা ধান এখনো জমিতে রয়েছে।

অব্যাত তাপাদাহে জমির ধান তুলতে কৃষকদের কষ্ট আরো বৃদ্ধি পেলেও আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা বৃষ্টি চাচ্ছে না।মঙ্গলবার সকালে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ক্ষেতে বাম্পার ফলন হলেও উদপাদিত ফসল ঘরে তুলতে ঝড়-বৃষ্টির আশংকায় ভুগছেন কৃষকরা।

ফুল্লশ্রী গ্রামের খোকন হাওলাদার ৬০ শতাংশ জমি ১২ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে বাকপাড়া ব্লকে বোরো চাষাবাদ করেছে। জমিতে ফসল ভাল হয়েছে। ধানকাটা শ্রমিক না পাওয়ায় স্ত্রী সেহরন বেগমকে নিয়ে প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে ধান কাটছে।

কৃষক ভবরঞ্জন বিশ্বাস তিনজন শ্রমিক দিয়ে নিজের ৮০শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাকে একাজে সহযোগীতা করছেন স্ত্রী কল্পনা বিশ^াস। চাষী হেমায়েত ফকির ৫ একর জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন। তিনি আল্লাহ’র কাছে ফরিয়াদ করে বলেন, হে আল্লাহ এই মুহুর্তে আমাদের এলাকায় বৃষ্টি দিয়ো না।

চাষী রাম প্রসাদ দাসের ৪০ শতাংশ জমির ধান পাকলেও শ্রমিক না পাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির আশংকায় নিজেই ধান কাটতে শুরু করেছেন।বাকাল এলাকার চাষী রমনী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, দুই একর জমির বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। প্রচন্ড তাপদাহের কারনে ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

একজন শ্রমিক সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানকাটা মজুরি দিতে হয় ৮শত টাকা। আমরা কষ্ট করে জমিতে বাম্পার ধান ফলিয়েছি। এই মুহুর্তে বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমবে। ফলে জমির ধান তুলছে কষ্ট হবে। এবং শ্রমিক পাওয়া যাবে না।

বাকাল গ্রামের চাষী সুশীল হালদার বলেন, প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে জমি থেকে পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। তাপদাহের কারনে ধান কাটতে গিয়ে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরছে। তাপদাহ থেকে ধান কাটার শ্রমিকদের নিরাপদে রাখতে খাবারের পাশাপাশি ঠান্ডা পানি ও খাবার স্যালাইনের দেওয়া হচ্ছে।

তার পরেও আমরা ধান ঘরে তুলতে আরো কষ্ট করতে রাজি আছি। এই মুহর্তে বৃষ্টি হলে আমার মত শতশত চাষী ধান তুলতে ভোগান্তিতে পরবে।

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা থেকে নির্মল দাসের নেতৃত্বে ১৯ জনের একটি দল ধান কাটার জন্য বসুন্ডা এলাকায় আসার পরে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে ধান কাটছে। তারা জানায়, আমরা মালিকদের কাছ থেকে ছয় ভাগায় ধান কাটতেছি।

তবে বৃষ্টি হলে ক্ষেতে পানি জমে আমাদের ধান কাটতে কষ্ট হবে। ঝালকাঠী জেলা থেকে রিপন হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি ধান কাটা শ্রমিকের দল আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামে এসেছে। রিপন জানান, আমরা এখানে একমাস ধান কেটে জনপ্রতি ২০ মন করে ধান নেওয়ার টার্গেট করেছি।

এতে আমাদের পরিবারের ৬ মাসের খাবার হবে। বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমলে আমারে টার্গেট পুরন হবে না। আমরা আগামী ১৫-২০দিনে বৃষ্টি চাই না।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা থেকে ধানকাটা হারভেস্টার মেশিন নিয়ে বড়মগরা গ্রামে এসেছেন ওবায়দুল্লাহ খলিল। তিনি প্রতি শতাংশ জমির ধানকাটা ও মাড়াই বাবদ ১শত টাকা নেন। যদি এখন বৃষ্টি হয় তাহলে জমিতে পানি জমলে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা সম্ভব হবে না। তাই এই মুহুর্তে বৃষ্টির প্রয়োজন নেই।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় সাংবাদিকদের বলেন, এই উপজেলায় ৯হাজার ৪ শত ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষেতের ৫০ ভাগের বেশী আধা-পাকা ধান এখনও জমিতে রয়েছে। এই মুহুর্তে বৃষ্টি হলে প্রায় ২৭ হাজার কৃষকরা জমির ধান তুলতে ভোগান্তিতে পরবেন।